বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীদের হুঁশিয়ার করলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপির উদ্দেশে তিনি বলেছেন, তার রাজ্যকে বাংলাদেশ করতে চাইলে দিল্লির মসনদ নাড়িয়ে দেবেন।

বুধবার কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক সমাবেশে মমতা বলেন, বাংলাদেশ করতে চাইলে, আমরা দিল্লির চেয়ার টলমল করে দেব।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, ‘কেউ কেউ মনে করছেন এটা বাংলাদেশ! আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি। ওরা আমাদের মতো কথা বলে। ওদের সংষ্কৃতি আর আমাদের সংষ্কৃতি এক। কিন্তু মনে রাখবেন বাংলাদেশ একটা আলাদা রাষ্ট্র। ভারতবর্ষ একটা আলাদা রাষ্ট্র। মোদি বাবু আপনার পার্টিকে দিয়ে আগুন লাগাচ্ছেন! মনে রাখবেন বাংলায় যদি আগুন লাগান, আসামও থেমে থাকবে না। নর্থইস্টও থেমে থাকবে না। উত্তরপ্রদেশও থেমে থাকবে না। বিহার-ঝাড়খণ্ড-দিল্লি ও থেমে থাকবে না।  আপনার চেয়ারটা টলমল করে দেব।’

তিনি আরও বলেন,  ‘বিজেপির মতো অত্যাচারী, অহঙ্কারী, চক্রান্তকারী, আমি দেখিনি। প্রধানমন্ত্রী শুধু এজেন্সি লাগিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে ঘটনায় তো পদত্যাগ করেননি। গতকাল ওরা লাশ চেয়েছিল, পুলিশ সংযত ছিল, রক্ত দিয়েছে, ধৈর্য দেখিয়েছে, পুলিশকে স্যালুট। ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক, চেয়েছিলাম ফাস্ট ট্র্যাক নিয়ে গিয়ে ফাঁসি দিতে। ধর্ষণ করলে একমাত্র শাস্তি ফাঁসি, রাজ্যের হাতে ক্ষমতা থাকলে ৭ দিনে ফাঁসি দিতাম। আগামী সপ্তাহে বিধানসভার অধিবেশন ডেকে ধর্ষণবিরোধী বিল পাস করাব।’

কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের’ ডাকা নবান্ন অভিযানে ‘পুলিশি অত্যাচারের’ অভিযোগে আজ বুধবার  ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি।

রাজ্য সরকারের তরফে মঙ্গলবারই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ধর্মঘটের কোনও প্রভাব যাতে না পড়ে তার জন্য সচেষ্ট থাকবে প্রশাসন। বুধবার পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী, র‌্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স।

এই ধর্মঘটকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অশান্তির খবর সামনে আসে। ধর্মঘটের বিরোধী তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের বচসাও বাঁধে। রেল ও সড়ক অবরোধ করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। আটক করা হয় একাধিক বিজেপি নেতাকে।

এদিনই আবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান থেকে একাধিক ‘বার্তা’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জী। প্রশ্ন তুললেন ধর্ষণের মতো ঘটনায় দোষীদের ফাঁসি নিয়ে।

মুখ্যমন্ত্রী যেমন ধর্মঘটের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, বিরোধীদের সতর্কবার্তা দিয়েছেন তেমনই কর্মবিরতি থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তাদের পেশাগত দায়িত্ব।

মনে করিয়ে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট আগেই তাদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিল। অন্যান্য রাজ্য কর্মবিরতিতে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেও তিনি নেননি।

অন্যদিকে, বিজেপি রাজ্যে অরাজকতা ছড়াতে চাইছে এই অভিযোগ তুলতে গিয়ে আরও একবার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বাংলাদেশের।

মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, “কেউ কেউ মনে করছেন এটা বাংলাদেশ। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি কারণ ওরা আমাদের মতো কথা বলে। ওদের সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতি এক। কিন্তু মনে রাখবেন বাংলাদেশ একটা আলাদা রাষ্ট্র, ভারতবর্ষ আলাদা রাষ্ট্র।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, বিজেপি এই রাজ্যে ‘অশান্তি’ সৃষ্টি করতে চাইলে তার প্রভাব অন্য রাজ্যেও পড়বে।

এদিকে অভিষেক ব্যানার্জী ধর্মঘট প্রসঙ্গে বলেছেন, “আজ ওরা (বিজেপি) বিচারের দাবিতে বনধ ডাকেনি, বরং কাল যারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে গ্রেফতার হয়েছে, তাদের ছাড়ানোর লক্ষ্যে বনধ ডেকেছে। প্ররোচনায় পা দেবেন না।”

তিনি বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, আজ যে ধর্মঘট ‘সফল হয়নি’ তা বাংলার মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদেরও কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল ছিল আজ।

মুখ্যমন্ত্রীর বুধবারের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, নিহত চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচার এবং কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তাসহ তাদের সমস্ত দাবি দাওয়া মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে।